বিজয়ের শুভেচ্ছা

 "এখানে আমার বন্ধুর স্মৃতি আছে''


‘গণসংগীতকে কুঁড়েঘর থেকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেছেন ফকির আলমগীর। ঋষিজ মানে ফকির আলমগীর। ফকিরের মধ্যে মোহনীয় একটা ব্যাপার ছিল। এত আদর করে ডাক দিত যে সাড়া না দিয়ে উপায় ছিল না। দুই বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল তুই-তোকারির। আজ খুব মনে পড়ছে সেই দিনের কথা। ১৯৭৮ সালে বিয়ের সময় ফকির আলমগীর আমাকে বলল সঙ্গে যেতে। আমিও গেলাম, পাঁচ দিন সঙ্গে ছিলাম। ওর বিয়ের পাগড়িটাও আমার পরানো।’
ফকির আলমগীরের গড়া প্রতিষ্ঠান ঋষিজের কাছ থেকে পদক নিতে গিয়ে এভাবেই বন্ধু ফকির আলমগীরকে স্মরণ করলেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ। ফকির আলমগীর ছিলেন তাঁর বন্ধু। ১৯৭৩ সালে টিএসসিতে ফিরোজ সাঁইয়ের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। সেই হিসাবে ৪৮ বছরের সম্পর্ক।

অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসে থাকা বন্ধুর স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীরের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। এই পুরস্কার আমার কাছে অন্য রকম। এখানে আমার বন্ধুর স্মৃতি আছে। আজ বন্ধু নেই। এই না থাকার বেদনা যে কী, তা মঞ্চের ওই মানুষ সবচেয়ে জানেন।’ এ সময় ঋষিজের বর্তমান সভাপতি ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীরের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল।

প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপনে গুণীজন পদক প্রদান করেছে ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী। ফেরদৌস ওয়াহিদ ছাড়াও এবারের আয়োজনে সংগঠনটি সম্মাননা প্রদান করেছে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ও নজরুলসংগীতশিল্পী শাহীন সামাদকে।

‘ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে’—চারণকবি মুকুন্দ দাসের অভয়বাণীকে কণ্ঠে ধারণ করে ১৯৭৬ সালের ২২ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ। ‘তমসার ক্ষণে নেব ঋষিজের নাম/ উৎসব দিনে নেব ঋষিজের নাম/ উজ্জ্বল সূর্যের আলোকিত বন্যায়/ মুক্তির সুরে ঋষিজের গান’—ঋষিজের এই গানের মতোই তাদের পথচলা। সাফল্যের স্মারক হিসেবে প্রতিবছর তিন গুণীকে সম্মান জানিয়ে, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করে সংগঠনটি, এবারও করেছে।



তবে এবারের আয়োজনটিতে ছিল বিষাদের ছায়া। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ফকির আলমগীরকে ছাড়াই আয়োজন করতে হয়েছে এবারের অনুষ্ঠান। গত ২৩ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান এই সংগীতশিল্পী। তাঁর না থাকার কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই ঋষিজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করেন স্বজনেরা।

Post a Comment

0 Comments