ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ৬ ধাপে ৯৫ জনের মৃত্যু

 

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা চলছেই। সর্বশেষ গতকাল শনিবার সকালে  জামালপুরের সরিষাবাড়ীর পিংনা ইউনিয়নে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৫ মাসে নির্বাচনী সংঘাত ও হানাহানিতে সারা দেশে ৯৫ জন নিহত হয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে। এই দুই ধাপে যথাক্রমে ৩০ ও ২৬ জন নিহত হয়েছেন। প্রথম ধাপে দুই ভাগে নির্বাচন হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগের নির্বাচন হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। মূলত তখন থেকেই সারা দেশে নির্বাচন ঘিরে সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা দেয়। প্রথম ধাপে ৫ জন, চতুর্থ ধাপে ১০, পঞ্চম ধাপে ২৩ ও ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে এক প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আর চুয়াডাঙ্গা ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন। 

সরিষাবাড়ীতে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির নাম ভোলা শেখ (৫৮)। গতকালের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আটজন। পুলিশ ১০ জনকে আটক করেছে। নিহত ভোলা শেখের বাড়ি কাজীপুর উপজেলার কাজলগাঁওয়ে।



পুলিশ, নিহত ব্যক্তির পরিবার ও দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পিংনা ইউপি নির্বাচন ষষ্ঠ ধাপে ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। পিংনা ইউপি নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে সুজাত আলী ও নুরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নলসন্ধ্যা গ্রামে নুরুল ইসলামের সমর্থক রুবেল মিয়া ভোটের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এ সময় সুজাত আলীর সমর্থকেরা রুবেল মিয়াকে (২৬) আটকে রাখেন। খবর পেয়ে সদস্য পদপ্রার্থী নুরুল ইসলামের বড় ভাই ভোলা শেখ (৫৮) ও তাঁদের লোকজন দুপুর ১২টার দিকে রুবেলকে উদ্ধার করতে আসেন। গ্রামের ফজল মেম্বারের বাড়ির পাশে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ভোলা শেখকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। গুরুতর আহত ভোলা শেখকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ গতকাল বিকেল পর্যন্ত নলসন্ধ্যা গ্রাম থেকে ১০ জনকে আটক করেছে। জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নবগঠিত সেনুয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাঁদের ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বেলা তিনটার দিকে ওই ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে।

আহত চার সাংবাদিক হলেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইনডিপেনডেন্টের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভীর হাসান, নিউজ বাংলার জেলা প্রতিনিধি সোহেল রানা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিং বিডির জেলা প্রতিনিধি মাইনুদ্দিন তালুকদার ও ঢাকা মেইলের জেলা প্রতিনিধি জাহিদ হাসান।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সেনুয়া ইউপিতে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নোবেল কুমার সিংহ, বিদ্রোহী আশরাফুল ইসলাম, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মতিউর রহমান ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মতিউর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

কয়েক দিন ধরে নির্বাচনী প্রচারণা ঘিরে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মতিউর রহমান অভিযোগ করেন, গতকাল দুপুরে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডলপাড়ায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তিনি উঠান বৈঠক করছিলেন। এ সময় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে চড়ে এসে নৌকার সমর্থকেরা উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকেন। তিনি (মতিউর রহমান) আওয়ামী লীগের সমর্থক হামিদুর রহমানের কাছে গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে নৌকার সমর্থকেরা তাঁকে ধাওয়া দেন। সেই ছবি তুলতে গেলে তাঁরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান।

হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে নোবেল কুমার সিংহ বলেন, ঘটনা শুনেছেন। এর সঙ্গে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, হয়তো অন্য কেউ হামলার ঘটনা ঘটিয়ে নৌকার সমর্থকদের নাম ব্যবহার করছে।

গত শুক্রবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি হামলায় নয়জন আহত হন। সংঘর্ষে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস এবং নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

Post a Comment

1 Comments

  1. "This means " কত মিনিটে শো করে?

    ReplyDelete