নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভুয়া পরীক্ষায় ৪৯৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । বিভিন্ন পদের বিপরীতে বিজ্ঞাপন ও আবেদন ছাড়াই এসব নিয়োগ। যোগ্যদের বাদ দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাবলিক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি পাওয়া প্রার্থীদেরও। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে নেওয়া হয়েছে সাজানো পরীক্ষা। নিয়োগ পাওয়া অনেকের পরীক্ষার খাতায় পরিদর্শকের স্বাক্ষর ও তারিখ নেই। অনেকের জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হয়েছে নিয়োগপত্র দেওয়ার পর। বেসিক ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন অর্থ আত্মসাৎকারীও। পদে পদে অনিয়ম হয়েছে পদোন্নতিতেও।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর সময়কালে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি দেওয়া হয় ৭৮৩ জনকে। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) ২০১৯ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। এসব কর্মকর্তার বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে সম্প্রতি ৫ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়। ৩ মাসের মধ্যে কমিটিকে অভিযুক্ত প্রত্যেক কর্মকর্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ আলাদা আলাদা প্রতিবেদন দিতে হবে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সিএজি অফিস যে চিহ্নিত করতে পেরেছে, এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। ব্যাংকটি যে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত, সেটি সবাই জানে। নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই জড়িতদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কারণ এ ধরনের জালিয়াতি তৎকালীন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ ছাড়া হতে পারে না।
গত বৃহস্পতিবার সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ কমিটি করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সদস্য করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে। সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সিএজির বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, নীতিমালা অনুসরণ না করে এবং উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আবেদনপত্র না থাকার পরও এসব কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের ২৯ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি।
সিএজির নিরীক্ষায় ২০১৩ সালের আগে-পরের নিয়োগ-পদোন্নতির তথ্য খতিয়ে দেখা হয়। শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ২০০৯-১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুই মেয়াদে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। তখন ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়। অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনার তদন্ত করছে দুদক। সিএজি সূত্র জানায়, বাচ্চুর দুই মেয়াদে সব রকম নিয়োগসংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ উঠে আসে ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে।
ভুয়া পরীক্ষায় ৪৯৮ নিয়োগ : বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১০ সালের সার্কুলার অনুযায়ী ডিএমডি ও জিএম ব্যতীত অন্যান্য পদে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদ কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট হতে পারবে না। কিন্তু ৪৯৮ জনকে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ নীতিমালাতেও বলা আছে, এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে সব পাবলিক পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণিসহ পাস
0 Comments