করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেশি ঢাকায়

 


অন্যান্য জেলার চেয়ে ঢাকায় করোনার সংক্রমণ বেশি। প্রায় দুই কোটি মানুষের এ শহরে বেশির ভাগই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। আবদ্ধ জায়গায় অনেকেই ভেন্টিলেশন সমস্যায় ভুগছেন। করোনার নতুন ধরন-উপধরনগুলোর আধিপত্যও এর জন্য দায়ী। এছাড়া জনসংখ্যার অনুপাতে কম টিকা দেওয়ার কারণেও বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান মহামারি সম্পর্কে নগরের প্রায় দুই কোটি মানুষের সবাই কমবেশি অবগত। কিন্তু অবস্থানগত কারণে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। ফলে অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত ১৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৮ হাজার ৫৬০ জন। এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ১৪৪ জনের।

ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ লাখ ১৮ হাজার ২৪৯ জন এং মারা গেছেন ১২ হাজার ৫২৪ জন। দেশের অন্য সাত বিভাগ মিলে যে পরিমাণ করোনা শনাক্ত হয়েছে, এর ৫০ দশিমক ১৭ শতাংশই ঢাকা বিভাগে।

এ ছাড়া মোট মৃত্যুর ৪৩ দশমিক ৮৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগে। এমনকি গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৬ হাজার ৩৬ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৭২ শতাংশের বেশি।

দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে। এই ঢেউ সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে জানুয়ারি মাসে। এই মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত বছরের জুন-জুলাইয়ে দেখা দিলেও আগস্টে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়।

এই মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে তিন লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৪ জন। এর মধ্যে মোট শনাক্তের অর্ধেক ছিল ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া প্রথম ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয় এপ্রিলে। এই মাসে করোনা শনাক্ত হয় এক লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭।

এ সময়েও অর্ধেক শনাক্ত হয়েছিল ঢাকায়। বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান কারণ করোনার নতুন ধরন ও উপধরন। ডেল্টা, ওমিক্রন বা এর সাব-ভ্যারিয়েন্ট যেটাই বলা হোক সেগুলো দ্রুত ছড়ায়।

ঢাকায় ঘনবসতি হওয়ায় সংক্রমণ সহজেই ত্বরান্বিত হয়। আরেকটি বিষয়, করোনার উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাতাসে এটির ঘনত্ব কমে অ্যারোসোল হিসাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে।

যেখানে ভেন্টিলেশন কম অর্থাৎ আবদ্ধ জায়গায় (যেমন-এয়ারকন্ডিশন যুক্ত পরিবেশ) ভাইরাসটির ঘনত্ব বেড়ে যায়। সেখানে অন্যরা নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে সহজেই আক্রান্ত হচ্ছেন। কারণ মানুষের সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা জীবাণুর ভাইরাল লোডের ওপর নির্ভর করে।

খোলা জায়গা থেকে বদ্ধ ঘরে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকছে। এ জন্য সবাইকে সঠিকভাবে মাস্ক পরা, ভেন্টিলেশন সুবিধায় থাকা, দ্রুত টিকা নেওয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দেশে করোনার প্রথম থেকে শুরু করে তৃতীয় ঢেউয়ে এসেও অন্যান্য স্থানের চেয়ে ঢাকায় শনাক্ত ও মৃত্যু বেশি।

Post a Comment

1 Comments

  1. আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হেফাজত করুন।

    ReplyDelete